আজকের সারাদেশ রিপোর্ট:
ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় আটকে থাকা চট্টগ্রামের বিশেষায়িত শিশু হাসপাতালের নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নে আর বাধা রইল না। দীর্ঘ পাঁচ বছরের ঝুলে থাকা জটিলতার নিরসন হতে যাচ্ছে। গণপূর্ত বিভাগের স্থাপত্য অধিদপ্তর থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো নকশাও চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ভূমি অধিগ্রহণের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে চিঠি চালাচালি চলছে।
নতুন নকশ অনুযায়ী, নগরীর বাকলিয়ায় এক দশমিক ৪৬ একর জমিতে মূল হাসপাতাল ভবন হবে। লালদীঘি এলাকায় বিভাগীয় পরিচালকের (স্বাস্থ্য) কার্যালয়ের পরিত্যক্ত জমিতে নার্সেস ডরমেটরি, ডক্টরস ডরমেটরি, এসেনসিয়াল স্টাফ ডরমেটরিসহ আবাসিক ভবনগুলো নির্মাণ করা হবে।
গণপূর্ত অধিদপ্তর চট্টগ্রাম-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী রাহুল গুহ আজকের সারাদেশকে বলেন, “প্রকল্পটি বাস্তাবায়নে বাকলিয়ার ওই জায়গা ছাড়া বিকল্প নেই। সেখানে মূল হাসপাতাল ভবন এবং বিভাগীয় পরিচালকের (স্বাস্থ্য) কার্যালয়ে আবাসিক ভবন করার প্রস্তাব স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আলোচনা হয়েছে। নকশায় কিছুটা পরিবর্তন আনতে বলা হয়েছে। এখন চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষা। এজন্য বাকলিয়ার ওই ভূমি অধিগ্রহণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সিভিল সার্জনকে আমি চিঠি দিয়েছি।”
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যমতে, শিশু স্বাস্থ্য সেবা দোরগোড়ায় পৌঁছানোর লক্ষ্যে ২০১৭ সালে মে মাসে চট্টগ্রাম বিভাগীয় শহরে ২০০ শয্যার বিশেষায়িত শিশু হাসপাতাল নির্মাণের অনুমোদন দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ফিজিক্যাল ফ্যাসিলিটিজ ডেভেলপমেন্ট (পিএফডি) শীর্ষক অপারেশনাল প্ল্যানের আওতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মেয়াদকাল ধরা হয় ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। শুরুতে হাসপাতাল নির্মাণে ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। অনেক খোঁজাখুঁজির পর বাকলিয়ায় ২ একর জমি নির্ধারণ করে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়। এর প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ১৩ নভেম্বর স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের নির্মাণ অধিশাখা প্রশাসনিক অনুমোদন দেয়। এরপর ওই জমিতে স্থাপনা নির্মাণের জন্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) অনাপত্তিপত্রের আবেদন করলে বাধে বিপত্তি। ওই জমির একটি অংশে সিডিএর মহাপরিকল্পনার আওতায় কর্ণফুলী রিভারফ্রন্ট রোড এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের আওতাধীন শাহ আমানত ব্রিজ কানেক্টিং রোডের প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন। এজন্য নির্ধারিত জমির শূন্য দশমিক ৫৪ একর অংশ বাদ দিয়ে ১ দশমিক ৪৬ একর জমিতে স্থাপনা নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে অনাপত্তিপত্র প্রদান করে সিডিএ। প্রয়োজনীয় জমির প্রায় এক-চতুর্থাংশ কমে যাওয়ায় হাসপাতালের অবকাঠামো নির্মাণসহ প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কা দেখা দেয়। এই সমস্যা সংকট নিরসনে গত দুই বছরে বেশ কয়েকদফা সভা করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
সর্বশেষ গত ৬ সেপ্টেম্বর মূল হাসপাতাল ভবন বাকলিয়ার ওই নির্ধারিত জমিতে নির্মাণের পাশাপাশি নগরীর লালদীঘি এলাকায় অবস্থিত চট্টগ্রামের বিভাগীয় পরিচালকের (স্বাস্থ্য) কার্যালয়ের পরিত্যক্ত শূন্য দশমিক ৫৯ একর জমিতে হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফদের জন্য দুটি ভবন নির্মাণের প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
চিকিৎসা সেবার জন্য বৃহত্তর চট্টগ্রাম ছাড়াও ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লার মানুষ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে আসেন। এছাড়া চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালেও চিকিৎসার জন্য রোগীরা নির্ভর করেন। এই দুটি সরকারি হাসপাতালে পৃথক শিশু ওয়ার্ড থাকলেও চট্টগ্রামে কোন বিশেষায়িত শিশু হাসপাতাল নেই। ফলে হাসপাতাল দুটির সক্ষমতার কয়েকগুণ রোগী সেবা দিতে হয়।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের নবজাতক ওয়ার্ডে অনুমোদন রয়েছে ৩২ শয্যার। রোগীদের চাপের কারণে অতিরিক্ত শয্যা সংযুক্ত করে ১০০ রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু বিপরীতে এখানে দৈনিক গড়ে ২০০ এর বেশি নবজাতক চিকিৎসা সেবা নেয়। আর শিশু ওয়ার্ডে ১৭ শয্যার অনুমোদন থাকলেও ২৭৩ রোগীকে চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। অথচ বিপরীতে দৈনিক গড়ে পাঁচ শতাধিক শিশু চিকিৎসা নেয়।
চমেক হাসপাতাল ছাড়াও আরেক সরকারি প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ৩০ শয্যার শিশু ওয়ার্ড রয়েছে। এখানে গড়ে দৈনিক শতাধিক রোগী চিকিৎসা নেয়।
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী আজকের সারাদেশকে বলেন, “চট্টগ্রামে দুই একরের মতো এতো জমি একসঙ্গে পাওয়া যায়নি। প্রকল্প বাস্তবায়নে ছাড়পত্রসহ প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আশা করছি, দ্রুত প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হবে।”