চার মাসে ছাত্রলীগে তিন পদ পেলেন একজন

আজকের সারাদেশ রিপোর্ট:
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখায় ছাত্রলীগের কমিটিতে পদ না পেয়ে তিন মাস আগে ক্যাস্পাসে অবরোধ করেছিলেন বঞ্চিতরা। টায়ার পুড়িয়ে-শাটল ট্রেন আটকে জানিয়েছিলেন ক্ষোভের কথা। এখন প্রকাশ্যে আন্দোলন না করলেও দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করে পদ না পাওয়া এই কর্মীদের ভেতরে দুঃখ রয়েই গেছে।
একদিকে যখন পদের জন্য হাহাকার সেখানে অন্যদিকে এক নেত্রী একের পর এক পাচ্ছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদ থেকে সুখবর। এই নেত্রীর নাম শামীমা সীলা। তাঁর কপালে চারমাসেই জুটেছে ছাত্রলীগের তিন শাখায় তিন পদ!
শামীমা কি এমন ‘আলাদিনের চেরাগের’ খোঁজ পেলেন যার জাদুতে জুটল তিনটি পদ-সেই প্রশ্ন এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম-ফেসবুকে উঠেছে। কারও প্রশ্ন-দলের জন্য কী এমন ত্যাগ স্বীকার করেছেন তাঁকে এতটা যোগ্য মনে করল কেন্দ্র। অবশ্য সব প্রশ্ন এড়িয়ে এই নেত্রী বলছেন-সবই পরিশ্রমের পুরষ্কার।
চার মাসে তিন পদ:
চলতি বছরের মার্চে শামীমা সীলাকে নিজ জেলা চাঁদপুর জেলার সহ-সভাপতির পদ দেয় সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সংসদ। এরপর ৩১ জুলাই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি হলে সেখানে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদ পান তিনি। অথচ ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী একটি বিশ্ববিদ্যালয় একটি জেলা শাখা সমমানের। যেখানে একবার যাকে সহসভাপতি পদ দেওয়া হয়েছে তাঁকে আবার ‘পদবনতি’ দিয়ে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদ দেওয়া নিয়ে সমালোচনা হয়। অবশ্য শামীমা নিজেই বিশ্ববিদ্যালয়ের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পরিচয়েই নিজেকে পরিচয় দিতে এতদিন সাচ্ছন্দ্যবোধ করে আসছিলেন। এদিকে গত বুধবার রাত ৯ টার দিকে নিজের ফেসবুকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের সই করা একটি প্যাডের ছবি শেয়ার করেন। সেই প্যাডে শামীমাকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সদস্য মনোনয়ন দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। পোস্টটি দ্রুতই ভাইরাল হয়ে যায়। একদিন আগে বিষয়টি শামীমা শেয়ার করলেও প্যাডে অবশ্য তারিখ লেখা আছে ৩১ জুলাই। অর্থাৎ একদিনেই বিশ্ববিদ্যালয় ও কেন্দ্রীয় পদ পেয়েছিলেন তিনি।
এদিকে শামীমার কেন্দ্রীয় পদ পাওয়ার বিষয়টি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়তেই অনেকে তাঁকে অভিনন্দন জানালেও কেউ কেউ সমালোচনায় মেতে উঠেন। শামীমার পোস্টের নিচেই তাঁদের কেউ প্রশ্ন করেন-‘কি করলে অল্প কিছু দিনে তিন জায়গায় স্থান পাওয়া যায়’, কেউ প্রশ্ন করেন-‘আর কোনো জায়গায় পোস্ট বাকি আছে কি?’
২০১৫-১৬ সেশনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগে ভর্তি হওয়া শামিমা সীমা ক্যাম্পাস কেন্দ্রীক রাজনীতিতে সক্রিয় হন আরও কয়েকবছর পর। ক্যাম্পাসের রাজনীতিতে তিনি নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। এই বলয়ের আরেক নেত্রী ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সদস্য সাবরিনা চৌধুরীর পেছনে তিনি ক্যাম্পাসে নানা কর্মসূচি পালন করতেন।
অভিযোগ আছে শামীমা কয়েক বছর আগে বিয়ে করেন। তাঁর স্বামী এখন উত্তর জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। শুরুতে দুজনই ফেসবুকে একসঙ্গে ছবি দিলেও ২০১৯ সালে এসে বেশিরভাগ ছবিই ফেসবুক থেকে মুছে দেন। অনেকে বলছেন, ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের ৫-এর গ ধারা অনুযায়ী, বিবাহিত ব্যক্তি ছাত্রলীগের কমিটিতে স্থান পাবেন না এবং কমিটিতে ঢোকার পর বিয়ে করার অভিযোগ উঠলে পদ বাতিলের কথা বলা হয়েছে। সেজন্য তিনি বিয়ের বিষয়টি ‘লুকাচ্ছেন’। তবে শামীমার পোস্টের নিচে এখন অনেকেই তাঁর বিয়ের ছবি দিচ্ছেন।

অল্প কিছুদিনে তিন পদ পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে শামীমা সীমা বলেন, ‘একসঙ্গে পাঁচ পদ ধারণ করা যায়। আমি বিশ্ববিদ্যালে দীর্ঘদিন রাজনীতি করেছি-সেজন্য আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে পদপ্রত্যাশী ছিলাম। এরপর কেন্দ্রের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিই। সেজন্য হয়তো কেন্দ্রীয় নেতারা আমাকে যোগ্য মনে করেছে-তাই সদস্য পদে মনোনীত করেছেন। বুধবার আমি সেই চিঠি পেয়েছি। আর অনেক বছর ধরে রাজনীতি করলেও পরিচয় ছাড়া ছিলাম। সেজন্য চাঁদপুর জেলা কমিটিতে সহসভাপতি পদ পেয়েছিলাম।’
তবে বিয়ের বিষয়টিও অস্বীকার করেছেন শামীমা। তিনি বলেন, ‘অনেকে ঈর্ষান্বিত হয়ে গুজব ছড়াচ্ছেন। আমি সবকিছু পরিস্কার করব।’
শামীমা তিনটি পদই পেয়েছেন জয়-লেখকের দায়িত্বে থাকার এই সময়ে।
শামীমাকে বারবার পদ দেওয়ার সমালোচনা করছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখার পদবঞ্চিতরা। নাম প্রকাশ না করে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারজন কর্মী বলেন, ‘আমরা ৪-৫ বছর ধরে ক্যাম্পাসে রাজনীতি করলেও পদ পাইনি। আমাদের ক্যাস্পাস জীবন শেষ হচ্ছে রাজনৈতিক পরিচয় ছাড়া। সেখানে একজনকে অল্প সময়েই তিন পদে পুরস্কৃত করলেন জয় ও লেখক। আমাদের অপরাধটা কোথায়?’
এ বিষয়ে জানতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তাঁরা ফোন ধরেননি।