অবশেষে পুলিশের জালে সোলাইমান বাদশা

চট্টগ্রামে চাঁদাবাজি, ছিনতাই, হত্যাসহ নানা অপকর্মের হোতা যুবলীগ নেতা সোলাইমান বাদশাকে গ্রেফতার করেছে পাঁচলাইশ থানা পুলিশ। রোববার (১১ ডিসেম্বর) রাতে চাঁদাবাজির অভিযোগে নগরের ২ নং গেইট এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
সোমবার(১২ ডিসেম্বর) দুপুরে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদনও করা হয়েছে। পাঁচলাইশ থানা সূত্রে জানা যায়, সোহেল ও মানিক নামে ২ ব্যক্তিকে আটক রেখে ৫ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে সোলাইমান। ভুক্তভোগীরা গত ৯ ডিসেম্বর পাঁচলাইশ থানায় মোট ৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগটি দাখিল করেন। পরে এটি নিয়মিত মামলা হিসেবে রুজু হয়। এ ঘটনায় গত ১১ ডিসেম্বর বিকাল সাড়ে পাঁচটায় নগরীর ষোলশহর ২ নং গেইট এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যুবলীগ নেতা সোলাইমান বাদশা পাঁচলাইশ থানার ষোলশহর দুই নম্বর গেট গ্রিনভ্যালি আবাসিক এলাকার আবু তাহেরের ছেলে। রাজনৈতিক বড় ভাইদের ছত্রছায়ায় কিশোর গ্যাংয়ে জড়িয়ে পড়ার মাধ্যমে অপরাধ জগতে পা বাড়ায় সোলাইমান। পরবর্তীতে নিজেই কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্বে আসে। নগরীর দুই নম্বর গেট থেকে অক্সিজেন মোড় অবধি তার অপরাধের অভয়ারণ্য। তার বিরুদ্ধে রয়েছে অভিযোগের পাহাড়। সোলাইমান বাদশা প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র নাছিম উদ্দিন সোহেল হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি।
সোলাইমানের অনুসারী কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা ২০১৮ সালে নগরীর দুই নম্বর গেটে এএসআই মালেককে গুলি করে। অভিযোগ উঠেছিলো ওই ঘটনায় ব্যবহৃত অস্ত্রটি ছিল সোলাইমানের। পরবর্তীতে এএসআই মালেক হত্যাচেষ্টা মামলায় তার অনুসারী খোকন চৌধুরীসহ তিনজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়। কিন্তু রহস্যজনক কারণে সোলাইমানকে তদন্ত প্রতিবেদন থেকে বাদ দেয়া হয়। এরপর ২০২১ সালে দুই শ্রমিককে অপহরণ করে আবারও আলোচনায় আসে সোলাইমান। সে বছর ১৬ এপ্রিল চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পে কর্মরত দুই শ্রমিককে তুলে নিয়ে চাঁদা দাবি করে সে। পরে তাকে গ্রেপ্তার করে পাঁচলাইশ থানা পুলিশ।
অভিযোগ আছে, নগরীর দুই নম্বর গেট থেকে অক্সিজেন পর্যন্ত অবৈধ টেম্পো লাইন থেকে চাঁদাবাজি করে সোলাইমান। এছাড়া ফিনলে স্কয়ার, চিটাগং শপিং কমপ্লেক্স, বিপ্লব উদ্যান হয়ে ২ নম্বর গেট, কর্ণফুলী কাঁচাবাজার পর্যন্ত প্রায় দুইশ ভাসমান ভ্যানগাড়ি বসিয়ে অনুসারীদের দিয়ে প্রতিদিন চাঁদা উঠায় সোলাইমান বাদশা। আল-ফালাহ গলিতে ইরাজ প্রপার্টিজ ডেভেলপার বিল্ডিয়ের নিচতলা জোর পূর্বক দখল করে রাখার অভিযোগও উঠেছিল সোলাইমানের বিরুদ্ধে। দুই নম্বর গেটের পুরো এলাকাটিতে কিশোর গ্যাংয়ের অন্যতম হোতা এই সোলাইমান। স্থানীয় সূত্র জানায়, দুই নম্বর গেইট, ষোলশহর স্টেশন, তুলাতুলি, সিগনাল এলাকা, আল-ফালাহ গলি, মেয়র গলিসহ আশপাশ এলাকায় মাদক ব্যবসা, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, দখল বেদখল, অপহরণ, অবৈধ গেস্ট হাউজ, অস্ত্র ব্যবসা, ভাড়াটে খুন করাসহ সব কিছুতেই তার গ্রুপের কেউ না কেউ জড়িত থাকে। পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি নাজিম উদ্দীন মজুমদার বলেন, চাঁদাবাজির অভিযোগে নগরের ২ নং গেইট এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। সোমবার দুপুরে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদনও করা হয়েছে।