খবরপ্রধান খবরসর্বশেষসারাদেশ

নগরে শীতের তীব্রতা, অসহায় মানুষের দুর্বাস্থা

নিজস্ব প্রতিবেদক

এখন পুরোদমে চলছে শীতকাল৷ নিম্ন আয়ের, দুস্থ মানুষের জন্য বিপর্যয় নিয়ে এসেছে এই ঋতু। গরম কাপড়ের অভাবে অসহায় জীবনযাপন করছে অনেকেই। চট্টগ্রাম নগরীতে সহসাই এরকম মানুষের দেখা মিলছে।

নগরীর ফুটপাত ও একাধিক রেলওয়ে স্টেশনে উন্মুক্ত পরিবেশেই বসবাস করছে অনেকেই। রাত নামলে ওখানেই ঘুমিয়ে পড়েন তারা। কিন্তু গায়ে একটি কম্বলও দেখা যায় না অনেকের। কেউ কেউ গায়ের চাদরেই রাত কাটিয়ে দিচ্ছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, নগরীর বিভিন্ন সড়কের পাশের ফুটপাত, চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন, ষোলশহর, ঝাউতলা, কদমতলী স্টেশনসহ বিভিন্ন স্থানে কেউ কেউ চটের বস্তা পেতে শুয়ে আছেন। অনেকের তো সেটাও নেই। তাছাড়া গায়ে জড়ানোর মত কোন কম্বলও নেই।

চট্টগ্রাম নগরীর ষোল শহর রেল স্টেশনে বিকলাঙ্গ হয়ে পড়ে থাকা ষাটোর্ধ মোহাম্মাদ আলমগীর হোসেন বলেন, কাজের খোঁজে সন্দ্বীপ থেকে চট্টগ্রাম এসেছিলাম দুই বছর আগে। কিছুদিন কাজও করেছি। টাকা পাঠিয়েছি পরিবারের জন্য। কিছুদিন যেতেই এক পা ও এক হাত বিকলাঙ্গ হয়ে যায়। কাজ কর্ম করতে পারিনা। পরিবারের কাছে টাকাও পাঠাতে পারিনা। তাই পরিবারও খবর নেয়না। তাই রেল স্টেশনে এভাবেই পড়ে আছি।

প্রচন্ড শীতে কিভাবে রাত কাটাচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে আলমগীর বলেন, একটা চাদর আছে সেটা জড়িয়ে কোন রকম রাতটা কাটিয়ে দেই।

এক পা হারানো পঁচাশি বছরের বৃদ্ধ জয়ন্ত দে। জীবিকার তাগিদে ফটিকছড়ি থেকে এসেছেন ৮ বছরের বেশি সময় ধরে। পড়ে আছেন রেলস্টেশনে। কেউ দয়া করে কিছু দিলে খান, না হয় উপোস করেই দিন পার করেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, সমস্ত কিছু ত্যাগ করে যে পরিবারের জন্য বের হলাম, সে পরিবারই খবর নিচ্ছে না ৮ বছর। কেউ দিলে খাই,না দিলে না খেয়েই পড়ে থাকি। কিছু মানুষ আসেন তারা মাঝেমধ্যে খাবার দিয়ে যান। তাদের দেয়া খাবারেই ক্ষুধা মিটছে। এভাবেই শীত আর মশার যন্ত্রণা নিয়েই দিন কাটাচ্ছি।

চট্টগ্রামে এক সপ্তাহের ব্যবধানে তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমেছে। এতে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। সঙ্গে যোগ হয়েছে ঠান্ডা বাতাস। সকালবেলা থাকছে কুয়াশায় ঢাকা। তীব্র শীতের কারণে কাবু হয়ে পড়েছে জনজীবন। বেশি বিপাকে পড়েছেন স্বল্প আয়ের লোকজন।

শীত বেড়ে যাওয়ায় সবচেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন রিকশাচালকেরা।    প্রতিদিন ভোরে রিকশা নিয়ে বের হন রিকশাচালক আব্দুল মোতালেব। তিনি বলেন, আমি ভোরে বের হই। কিছুদিন ধরে ঠান্ডায় ঘর থেকে বের হতে দেরি হচ্ছে তার। দুপুরের দিকে একটু রোদের দেখা মিললেও, দুপুর গড়িয়ে বিকেল নামতেই ঠান্ডা পড়ে। তাই আগেভাগে ঘরে চলে যেতে হয়। তা ছাড়া বেশি ঠান্ডায় কষ্ট হয় রিকশা চালাতে। কমে গেছে উপার্জনও।

ঠান্ডা বেড়ে যাওয়ায় কষ্টে আছেন লোকজন। বেশি দুর্ভোগে ফুটপাত ও খোলা আকাশের নিচের থাকা দরিদ্র মানুষেরা। তাদের অনেকের পর্যাপ্ত গরম কাপড় নেই। তাই ঠান্ডা থেকে বাঁচতে কাগজ, পলিথিন ও ছেঁড়া কাপড় জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন তারা।

নগরের কোতোয়ালি এলাকার ভ্রাম্যমান দোকানদার এনায়েত উল্লাহ। বিভিন্ন গাড়ি চালকদের সকালের নাস্তা ও চা বিক্রি করের তিনি। শীতের কারণে তার দোকান খুলতে বেলা হয়ে যায়। যার কারণে বেচাকেনাও তেমন হয় না। তিনি   বলেন, আগে ভোরে দোকান খুলতাম। দোকানে ভোরে বিক্রি ভালো হয়। কিন্তু এখন শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় লোকজন খুব একটা আসেন না। আবার ঠান্ডায় তাদেরও বসে থাকতে কষ্ট হয়। এর পর সন্ধ্যার দিকে বেচাবিক্রি বেশি হতো। কিন্তু ঠান্ডায় রাস্তাঘাটে লোকজন কম থাকেন। তাই বিক্রিও হয় না তেমন।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button