খবরসারাদেশস্বাস্থ্য

অসুস্থ বাবাকে নিয়ে শাহীন যাবেন কোথায়?

আজকের সারাদেশ রিপোর্ট:

সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরায়। এর মধ্যে আবার বাবা খোরশেদ আলী বহুদিন ধরেই কিডনি-রোগী। তাঁকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য পরিবারে তেমন কেউই নেই। ছেলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র মো. শাহীন আলম তাই বাবা-মাকে ঠাঁকুরগাওয়ের বাড়ি থেকে নিয়ে আসেন নিজের কাছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ ক্যাম্পাসে ছোট্ট একটি বাসা নিয়ে থাকেন তাঁরা। দিনে চারটা টিউশনি করে পরিবার চালানোর পাশাপাশি বাবাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিয়ে সপ্তাহে তিনটি করে ডায়ালেসিসও করে আসছিলেন শাহীন।

টিউশনি থেকে আসা আয়ে খরচ কোনোমতে মিটিয়ে আসছিলেন শাহীন। কিন্তু এখন হঠাৎ ডায়ালেসিসের দাম বহুগুণ বাড়ায় চোখে শর্ষে ফুল দেখছেন এই তরুণ। ভেবে পাচ্ছেন না সামনের ডায়ালেসিস কীভাবে করবেন?

কিডনি ডায়ালাইসিসের ব্যয় বাড়ানোর প্রতিবাদে গতকাল রোববার সকালে চমেক হাসপাতালে আন্দোলন করেছেন রোগী ও তাঁদের স্বজনেরা। কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টারের সামনে হওয়া এই কর্মসূচিতে ছিলেন শাহীনও। সেখানে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন এই সংগ্রামী তরুণ।

শাহীন বলেন, ‘রাতদিন খেটে টিউশনি করিয়ে বাবাকে ডায়ালসিস করাচ্ছি। আমার বাবার মাসে কখনো ১২টি কখনো ১৩টি ডায়ালসিস করতে হয়। এতদিন প্রতি ডায়ালসিস ৫১০ টাকা করেই করাতে পারতাম। এখন ভর্তুকি কমানোয় কয়েকগুণ দাম বেড়ে গেছে। বাবাকে নিয়ে যাব কোথায়? সামনের ডায়ালসিসস কীভাবে করব-তা এখনো জানি না।’

আন্দোলনে নামা রোগী ও রোগীর স্বজনেরা জানান, প্রতিমাসে একজন রোগীকে অন্তত ৮ বার কিডনি ডায়ালাইসিস করতে হয়। এত দিন দুটি মূল্যে ডায়ালাইসিস সেবা নিতেন রোগীরা। এর মধ্যে ভর্তুকির যে সেবা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দিত, তার মূল্য ছিল ৫১০ টাকা। তা বেড়ে এখন ৫৩৫ টাকা হয়েছে। এ ছাড়া ভর্তুকি ছাড়া ২ হাজার ৭৮৫ টাকায় যে ডায়ালাইসিস সেশন চালাত, তা বেড়ে এখন করা হয়েছে ২ হাজার ৯৩৫ টাকা।

এখন নতুন শর্তও বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এত দিন যাঁরা মাসে আটটি সেশন ভর্তুকি মূল্যে ডায়ালাইসিস করাতে পারতেন, তাঁদের এখন থেকে অর্ধেক অর্থাৎ চারটি ডায়ালসিস পুরো ফিতে করতে হবে।

মূলত সরকারি–বেসরকারি অংশীদারত্বে (পিপিপি) পরিচালিত চমেক হাসপাতালের কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টারটি চালু হয় ২০১৭ সালে। বর্তমানে ৩১টি মেশিন নিয়ে চলছে এ সেন্টার। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী ভারতীয় প্রতিষ্ঠান স্যানডোর এই সেন্টারে তাদের কার্যক্রম দশ বছর চালিয়ে যাবে। এর জন্য সরকারি জায়গা ব্যবহার করবে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিটি কিডনি ডায়ালাইসিসের বিপরীতে বর্তমানে সরকারকে এই প্রতিষ্ঠানের কাছে প্রায় ৩ হাজার টাকা করে পরিশোধ করতে হয়।

বছরের শুরুতে ডায়ালসিসের দাম বাড়ানোর পর থেকে রোগী ও তাঁদের স্বজনদের মধ্যে হতাশা কাজ করছিল। গত শনিবার থেক আগের ফি ও ভর্তুকি সেশন আগের মতোই বহাল রাখার দাবি জানিয়ে আসছিলেন তাঁরা। গতকাল তা বিক্ষোভে গড়ায়।

এদিকে নিয়ম মেনেই ফি বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছে চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান বলেন, ‘মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী বছরে ভর্তুর্কিতে সাড়ে ৬ হাজারটি ডায়লাইসিস সেবা দেওয়া যাবে। সব কটি সেশন ভর্তুকি না দিয়ে অর্ধেক ভর্তুকির সেবা নিতে বলায় রোগীরা অসন্তুষ্ট হয়েছেন। ভর্তুকি আরও বাড়ানো যায় কি না, তা নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করছি শিগগির এই বিষয়ে সমাধান মিলবে।’

সরকারের পাশাপাশি চট্টগ্রামের ধনাঢ্য ব্যক্তিদেরও এক্ষেত্রে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান শামীম আহসান।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button