চিফ কমার্শিয়াল ম্যানেজারের হাতে জিম্মি রেলের ক্যাটারিং সার্ভিস

আজকের সারাদেশ রিপোর্ট:

রেলওয়ে ক্যাটারিং সার্ভিস রেলওয়ে (পূর্বাঞ্চল) চিফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার (সিসিএম) মো. নাজমুল ইসলাম ও একদল ঠিকাদারদের হাতে জিম্মি। দীর্ঘদিন ধরে তারাই নামে-বেনামে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দিচ্ছে। ঠিকাদার অলিউর রহমান এসব টেন্ডার দেখবাল করেন। এতে রেলের যাত্রীদের বাধ্য হয়ে নিম্নমানের খাবার খেতে হচ্ছে। সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে রেলওয়ের।

জানা গেছে, রেলওয়ে ক্যাটারিং সার্ভিসের অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে বারংবার অভিযোগ উঠে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হওয়ার পরও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয় না রহস্যজনকভাবে। এতে চিফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার (সিসিএম) মোঃ নাজমুল ইসলাম ও ঠিকাদারী সিন্ডিকেটের প্রধান অলিউর রহমান বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।

যাত্রীরা বলছেন, রেল যাত্রায় দীর্ঘ পথে স্বাভাবিকভাবেই কিছু খাবার কিনে খেতে হয়। কিন্তু বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী রেলে মানসম্মত খাবার দেয়া হয় না। টাকা দিয়েও পঁচা বাসি খাবার খেতে হয় তাদের। এগুলো পরিবর্তন হওয়া দরকার। যাত্রীসেবার মানও খুব খারাপ। অথচ সরকার রেলের সেবা বাড়াতে অনেক বেশি জোর দিলেও বাস্তবে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।

রেলওয়ে (পূর্বাঞ্চল) চিফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার (সিসিএম) মোঃ নাজমুল ইসলাম বলেন, এখানে আমার অথবা আমার দপ্তরের কোন অনিয়ম বা ব্যর্থতা নেই। এটি একটি প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত। আমাদের একটি নীতিমালা আছে যা ২০২০ সালের ২০ অক্টোবর থেকে কার্যকর। ওপেন টেন্ডারের মাধ্যমে যোগ্যতা তালিকা তৈরি করতে হবে। অর্থাৎ দৃশ্যমান ক্যাটারিং প্রতিষ্ঠানের তালিকা তৈরি করা হয়। যোগ্যতা যাচাই তালিকায় ৪৩ জন অংশগ্রহণ করেন। তদন্ত সাপেক্ষ তাদের তদন্ত প্রতিবেদন সংগ্রহ হয়েছে। পরবর্তীতে বিভিন্ন সভা করে মন্ত্রণালয় থেকে সিদ্ধান্ত হল ক্যাটারিং কোম্পানি গঠনের। আমরা নীতিমালার আলোকে অগ্রগতি হচ্ছি। আবার নীতিমালা হবে অথবা কোম্পানির আদলে তা নিয়ে দোটানায় থাকতে হচ্ছে। তার জন্য সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষমান।

তিনি বলেন, নিম্নমানের খাবার সরবরাহ করা প্রতিষ্ঠানদের জরিমানা করা হয় কিন্তু সরকার রাজস্ব হারাবে বলে তাদের বাদ দেওয়া যায় না। মন্ত্রণালয় রেলভবন ও ডিজি দফতরের নির্দেশনা ছাড়া টেন্ডার আহ্বান করতে পারব না। মন্ত্রণালয় থেকে টেন্ডার প্রক্রিয়া না করলে আমার করার কিছুই থাকে না। ক্যাটারিং সার্ভিসের টেন্ডারের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ও নতুন টেন্ডার না হওয়ার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে দায়ী করেছেন এবং তিনি অনৈতিকভাবে কোন আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করেন না।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, সুবর্ণা একপ্রেস (এসএ কপোরেশন)। মহানগর গোধূলি এবং তূর্ণা এক্সপ্রেস (সপ্নিল এসোসিয়েশন।) তিস্তা এক্সপ্রেস (জান্নাত টেডিং) পারাবত এক্সপ্রেস (প্রগতি রেলওয়ে ক্যাটারস) মহানগর ও বিজয় এক্সপ্রেস (শাহা আমানত এক্সপ্রেস) কালানী এক্সপ্রেস (মোরশেদ) হাওর এক্সপ্রেস (মাহী কনসোটিযাম) সোনার বাংলা (হাবিব বাণিজ্য বিতান) মোহন গঞ্জ এক্সপ্রেস (সামির এন্টারপ্রাইজ), এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গুলোর মালিক থেকে অবৈধ ভাবে বিপুল অর্থের বিনিময়ে বারবার ক্যাটারিং সার্ভিসের টেন্ডার গুলো নবায়ন করে দেয়ার অভিযোগ।

তথ্য মতে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এবং রেলওয়ের আসাধু কমকর্তাদের মাধ্যম হয়ে কাজ করে অলিউর রহমান নামের ওই ঠিকাদার। এই সিন্ডিকেটের দেয়া খাবারের মান যেমন নিম্নমানের সে অনুযায়ী খাবারের দাম আকাশ্চুম্বি। অধিকাংশ খাবার ই থাকে বাসি, অনেক সময় দেখা গেছে অনেক যাত্রী এ-ই বাসি খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঠিকাদার বলেন, আমরা বছরের পর বছর ঘুরেও একটি টেন্ডার পায় না। কিন্তু ওই সিন্ডিকেটটি প্রতিবারই টেন্ডার গুলো নবায়ন করে নিয়ে যাচ্ছে, যা রেল আইন অনুযায়ী সম্পূর্ণ বেআইনী।

বছরের পর বছর একটি টেন্ডারও না পাওয়াই আমার মতো আরও অনেক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান অর্থিক ভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে, আবার অনেক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে। সাধারণ ঠিকাদারদের আজকের এই পরিণতির কারণে আছে অলিউর রহমান নামের ঠিকাদার। এই অলিউর রহমানই রেলওয়ের দুনীতিগ্রস্থ কর্মকতা এবং অসাধু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গুলোর মাধ্যমে হিসাবে কাজ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *